Tuesday, 20 November 2012

বিয়ের আয়োজন


বিয়ের আয়োজনের যেন শেষ নেই। আবার বছরের পর বছর ধরে স্মৃতিতে থাকবে এই কয়েকটি দিন। তাই বিয়ের প্রতিটি আয়োজনেই থাকা চাই বৈচিত্র্য।এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ওয়েডিং ডেকোর বাই নুসরাতের প্রধান নির্বাহী নুসরাত নওরীন।

পানচিনি
একখানি থালায় খিলি করা পান দিয়ে গাছপালা আর ঘরবাড়ি তৈরি করে নিতে পারেন। রঙিন মসলা আর সুপারি দিয়ে তৈরি করে দিতে পারেন পথখানি। সবুজ মসলায় হয়ে উঠতে পারে সবুজ মাঠ। এর মাঝে বর-কনে সাজানো ছোট্ট দুটি পুতুল সাজিয়ে দিতে পারেন। আবার বড় একটি রুপার থালায় পান আর সুপারির সাদামাটা উপস্থাপনটাও কিন্তু খারাপ লাগার কথা নয়। আনারসে পানের খিলি গেঁথে গেঁথে তৈরি করে নিতে পারেন সুন্দর একটা ময়ূর। চাইলে দু-একটা ময়ূরের পাখাও করতে পারেন যোগ। আর ময়ূর বসে থাকা থালায় ছড়িয়ে দিন সুপারি ও মিষ্টি জর্দা। পানের সঙ্গে মাটির হাঁড়িতে কিংবা কাঠের পাত্রে দিতে পারেন মিষ্টি।

আংটি বদল
নুসরাত নওরীন বলেন, ‘গোলাপের পাপড়ির মাঝে আংটি সুন্দর করে বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ঝিনুকের খোলার ভেতরেও মুক্তাঘেরা আংটিখানি আপনার সামনের দিনের চলার পথের জ্যোতি বাড়াবে। ছোট একখানি ট্রেতে লাল মখমল কিংবা শিফনের কাপড়ের ওপর সাদা ঝিনুকটা দেখতে সবারই চোখ জুড়িয়ে যাবে।’
মাটির বড় পাত্রে পানির ওপর ভাসা পান পাতায় শোভা বাড়াবে বর-কনের আংটি দুটি। বিয়ের শেষে কনের বরের বাড়ি যাওয়ার পর ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে রাখা থালি থেকে বর-কনে দুজনকে আংটি খুঁজে বের করার খেলায় মাতিয়ে তুলতে পারেন। তবে বর-কনে দুই পক্ষই সাবধান! কারণ, মজা করে বলা হয় আংটিখানি যে পক্ষ আগে পাবে, সারা জীবন তার কর্তৃত্ব চলবে সংসারে।

রাখির জৌলুশ
মেয়েদের ক্ষেত্রে সোনালি রাখির সঙ্গে যোগ করে দিতে পারেন বড় দুটি ঝুমকা। ছেলেদের রুপালি রাখিতে থাকতে পারে মুক্তা কিংবা সাদা পুঁতির কারুকাজ। বড় কোনো থালিতে কাঁচা হলুদ আর মেহেদির পাশে প্রদীপের আলোয় মেলে ধরতে পারেন রাখি। আপনি চাইলে আলাদা ছোট থালিও রাখতে পারেন রাখির জন্য।

ফুলের গয়না
হলুদ কিংবা মেহেদির আয়োজনে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে কনের সাজে ফুলের গয়নায় জুড়ি নেই। এসময়ে কনের পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে আবার কনট্রাস্ট রঙের বাহারি সব ফুলের গয়না জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাজা ফুলের গয়না হিসেবে অর্কিড বেশি চলছে। কারণ, এর ওপর ইচ্ছেমতো রং ছড়িয়ে করে নেওয়া যায় পোশাকের উপযোগী গয়না। এর সঙ্গে পুঁতি, পাথরও যোগ করে নিতে পারেন। শুধু কানের ফুল আর গলার হারই নয়, বাজু, টিকলি, টায়রা—এগুলো কন্যার সাজকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। আপনি তাজা ফুলের পাশাপাশি কৃত্রিম ফুলের গয়নাও বেছে নিতে পারেন।

মাছ পাঠানো
বিয়ের আগের দিনে বরপক্ষের পাঠানো মাছ কনেবাড়ির প্রধান আকর্ষণের বিষয়। তাই তাদের উপস্থাপনটাও হওয়া চাই অনেক বেশি আকর্ষণীয়। পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, গামছা আর ছোট ছাতায় একটি মাছ সেজে উঠতে পারে বরের সাজে। বর-মাছের মুখে টাকা গুঁজে দিতেও যেন এ সময় ভুল না হয়। আর লাল জরির শাড়িতে নথ-টিকলিতে সেজে ওঠা কনে-বউ মাছ তো বরের পাশে থাকছেই।

আয়না দেখা বা শাহ নজর
বিয়ে পড়ানোর পর বর-কনের এবার চোখ চাওয়াচাওয়ির সুযোগ। লাজুক লতা কনের মুখ সরাসরি চাহনিতে দেখতে বরেরও যেন আজ লাজের শেষ নেই। আয়োজনটা তাই হয়ে আসছে শাহ নজরে। বড় একখানি কাঠের আয়নার চারপাশটা ফুলে ফুলে মুড়ে নেওয়া যেতে পারে। তার ফাঁকে ফাঁকে মুক্তা আর ঝিনুক-শামুকও করতে পারেন যোগ। আয়নার ওপরে মেলে ধরতে পারেন রঙিন কোনো দোপাট্টা। দোপাট্টার আড়ালে আয়নায় এবার শুধু বর-কনের মুখ। কী, হলো তো শাহ নজর?

গেট ধরা
বিয়ের আয়োজনে কনেবাড়ির একদল তরুণ-তরুণীর বহুল আকাঙ্ক্ষিত ক্ষণের এবার অবসান হবে। এ জন্য কিন্তু দুই পক্ষেরই আয়োজন জরুরি। কনেপক্ষ যত ভালো অভ্যর্থনা দিতে পারবে, বরপক্ষ থেকে প্রাপ্তির অঙ্কটাও তেমন মোটা হবে। যে ফিতা কেটে বরপক্ষ প্রবেশ করবে, সেই ফিতাটি হওয়া চাই সুন্দর। ফুলে ফুলে মোড়াও হতে পারে সেটি। বরপক্ষের টাকা দেওয়ার থলেটা হতে পারে মখমলের। বর প্রতীকী কোনো বড় নোট আর তার ভেতরের খামে ভরে দিন টাকা। আপনি শোলা দিয়ে তৈরি সোনালি বড় একখানি কয়েনও দিতে পারেন। তবে যা-ই করুন, টাকাটা যেন থাকে ঠিকঠাক। নতুবা বরমশাইয়ের সেই গঞ্জনা সইতে হবে চিরকাল।

আগমনের ধ্বনি
বর-কনের আগমনের ধ্বনি এবার শোনা গেল। বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন এবার দুজনেই। বর-কনের আগমনটা হতে পারে বৈচিত্র্যময়। কনে চড়তে পারেন পালকিতে। পালকিটি হতে পারে ময়ূর পালকিও। তবে বিয়ের মঞ্চে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যেন পালকির সোনালি পর্দাখানি না খোলা হয়। ছেলে আসতে পারে ঘোড়ায় চড়ে। সাদা ঘোড়ার ওপর একখানি আসন বসিয়ে তার ওপর ছড়িয়ে দিতে পারেন রঙিন কাপড়। বরের পেছনে ছাতা ধরে থাকতে পারেন কেউ কেউ। নুসরাত নওরীন বলেন, বর-কনের আগমনটা এখন অনেক বেশি আকর্ষণীয় করা হয়। কখনো কখনো ঘোড়ার গাড়ি আবার কখনো একখানি রিকশা সাজিয়ে কনে যাত্রীকে নিয়ে বর রিকশাচালককেও দেখা যায় আজকাল। কনে নিয়ে এবার বরের জীবনযাত্রা শুরু হলো।


No comments:

Post a Comment