Monday, 19 November 2012

প্রিয় মুখখানি



‘হারানো’ শব্দটি শুনলেই এখনো কঠিনভাবে শিউরে উঠি। বুকের ভেতরটা হুহু করে ওঠে। চিৎকার করে শুধু কাঁদতে ইচ্ছে হয়। কেন এমন হলো? সত্যি সত্যিই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মায়াভরা সেই মুখখানি। আর কোনো দিনই ফিরে পাবো না আমার হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মুখ, প্রিয় মুহূর্ত।
পৃথিবীর বুকে প্রত্যেক সন্তানের মহা মূল্যবান সম্পদ হলো বাবা-মা। যাদের একজনের অবর্তমানে সমগ্র পৃথিবীই অন্ধকার মনে হয়। বলছি আজ নিজের জীবনচিত্রের আলোকে। আব্বু আমার হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। হারিয়ে গেছে সব আদর, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়ামমতা।
আব্বু আমাকে ভীষণ ভালোবাসত। দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে রাতে যখন সবাই একত্র হতাম, তখন শুরু হতো অনেক গল্প, অনেক মজা। আমি আব্বুর ছোট মেয়ে হওয়ায় আদর, আবদার, আহাদের পরিমাণটা অন্যদের থেকে একটু বেশিই ছিল। একটু যদি এদিক-ওদিক হতো, তবেই শুরু হয়ে যেত মান-অভিমান। আর সেই মান ভাঙাতে আব্বুর কত রকম প্রচেষ্টা। সবটাই এখন শুধু স্মৃতি।
একবার আব্বু এক সপ্তাহের জন্য অফিসের কাজে ঢাকায় গিয়েছিল। তখন আমি কাস ফাইভে পড়তাম। আব্বুকে ছেড়ে ওই এক সপ্তাহ যে আমি কতটা কষ্টে ছিলাম তা আমার লেখা দেখেই  আব্বু বুঝেছিল। আব্বু ঢাকায় চলে যাওয়ার দিন থেকে ফিরে আসার দিন পর্যন্ত লিখেছিলাম অনেক চিঠি। তা দেখে আব্বু আমাকে বলেছিলÑ ‘পাগলি মেয়ে কোথাকার, এত কান্না করলে হয়? আব্বু মাত্র বাড়িতে ছিল না তাই এ অবস্থা, আর যখন দুনিয়াতেই থাকবে না তখন কী হবে?’
কথাগুলো শুনে অনেক কেঁদেছিলাম। সান্ত্বনাও পেয়েছিলাম অনেক। কিন্তু আজ যে আমি কিছুই পাই না। সবই হারিয়ে গেছে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অপেক্ষার প্রহর গুনলেও আব্বু আর কখনোই ফিরে আসবে না। ডায়েরির পর ডায়েরি শেষ হলেও কেউ তা দেখে আর বলবে নাÑ ‘পাগলি মেয়েটা আমার…।

No comments:

Post a Comment